‘বর্ণমালায় পুষ্টি জানো’ বইটি ছোট্ট সোনামণিদের জন্য খুবই দরকারি। আমার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে এ বই লেখা। আজকাল বড়রাও দেশি শাক—সবজি, ফলমূল, মাছ—মাংসের ঠিকমতো নাম না জানলে সমস্যায় পড়েন। শহরাঞ্চলের মানুষ এসবের অনেক কিছুই চেনেন না বা জানেন না। আমরা বড়রাই যদি ঠিকমতো না চিনি বা না জানি তাহলে ছোট্ট সোনামণিরাই বা কীভাবে জানবে! ওদের বর্ণমালা শেখার সময়ই শাক—সবজি, ফলমূল, মাছ—মাংস সম্পর্কে ছোটবেলা থেকেই জানানো প্রয়োজন। চিনতে পারা এবং উপকারিতা জানলে ছোটদের খাওয়ানো সহজ। চারিদিকে সব রেডি ফুড, প্রসেসড ফুড, ফাস্ট ফুডের মাঝে ছোট্ট সোনামণিদের একেবারে যেন উপকারী খাবার খাওয়ানোই হয় না। ওদের সুস্থতার জন্য পুষ্টিকর ও উপকারী খাবারগুলো চেনা ও জানা প্রয়োজন। সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো, হাড় ও দাঁতের সঠিক পুষ্টি, রক্তস্বল্পতা দূর করা, ক্ষয়পূরণ, দুর্বলতা কাটানো, অরুচি প্রতিরোধ, মেধার সঠিক বিকাশের বিষয়গুলো। তাই আমি ভেবেছি একজন পুষ্টিবিদ হিসেবে ছোট্ট সোনামণিদের জন্য কিছু করা উচিত। এ বইটির মাধ্যমে স্বাস্থ্য ও সুস্থতার জন্য বর্ণমালার পাশাপাশি শাক—সবজি, ফলমূল, মাছ—মাংসের নাম চিনতে ও জানতে পারবে। উপকারিতা জানতে পারলে খাওয়ার আগ্রহও বাড়বে। বইটিতে আমাকে শাক—সবজি, ফলমূল ও মাছের নাম সংগ্রহে সহযোগিতা করেছে পুষ্টিবিদ কানিজ ফাতেমা। মা—বাবার কাছে বিশেষ অনুরোধ থাকবে, যে শিশু এখনো পড়তে শেখেনি তাকে পড়ে শোনান। বইটি এমনভাবে লেখা হয়েছে, যেন ছোটদের পাশাপাশি বড়রাও উপকৃত হন। বিশেষ দ্রষ্টব্য: স্বরবর্ণের বেশির ভাগ বর্ণ মূলত ব্যঞ্জনবর্ণের সাহায্যকারী বর্ণ। আবার কিছু কিছু ব্যঞ্জনবর্ণ রয়েছে, যা শব্দ গঠনের শুরুতে ব্যবহৃত হয় না। কিছু বর্ণ দিয়ে সরাসরি খাবারের নাম না থাকলেও বইটিতে শব্দের মধ্যে তা ব্যবহৃত হয়েছে। সৈয়দা শারমিন আক্তার প্রধান পুষ্টিবিদ, ডায়েট কাউন্সেলিং সেন্টার info@dietcounselingcentre.com
সম্প্রতি সাধারণ মানুষের মধ্যে খাদ্য ও পুষ্টি বিষয়ক সচতনতা বেড়েছে। প্রযুক্তির কারণে এখন আমরা চাইলেই অনেক কিছুই জানতে পারি। ভাল মন্দ আমরা বুঝতে চেষ্টা করি। সচেতনতা আছে, তবে কখনওবা অল্পে বেশি জানার চেষ্টায় ভুল হয়ে যায়। শুধুমাত্র খাবারের মাধ্যমে বিভিন্ন পুষ্টিগত স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে স্বাস্থ্যসমস্যারও জন্ম হচ্ছে। এতে রাতারাতি কিছু উপকারিতা পেলেও পরবর্তি জীবনে মারাত্মক ক্ষতির সম্ভাবনা থাকছে। আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ‘ইউনিসেফ’ পুষ্টিগত স্বাস্থ্যসমস্যার সম্পূর্ণ সমাধানে ৩টি উপায় বের করেছে। যার সমন্বয়ে যে কোন ধরনের পুষ্টিগত স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধান সম্ভব। যা বাংলায় পুষ্টিত্রিভূজ (Nutrition triangle) নামে পরিচিত। এই উপায়গুলোর মধ্যে রয়েছে খাদ্যের নিশ্চয়তা, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও যত্ন। এই ৩টি উপায় একটা আরেকটার পরিপুরক। এ থেকে যে কোন একটার অভাব থাকলেও স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। আমার গবেষণা কার্যেও এই পুষ্টিত্রিভূজ ব্যবহার করে পুষ্টিগত স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধান করেছি। এই বইটিতে এইসব বিষয় বিবেচনা করে আরো বিস্তারিত লেখা হয়েছে। সাধারণ মানুষ পুষ্টি বিষয়ক বিভিন্ন বিষয় যেমন জানতে পারবেন, তেমনি রোগের সাথে খাদ্য ও পুষ্টির সম্পর্ক এবং সমস্যা সমাধানের বিষয়েও জানতে পারবেন। এমনকি পেশাগত কাজের ক্ষেত্রে ডায়েট কেমন হবে সেই ধারনাও পাওয়া যাবে। আভ্যন্তরিন সৌন্দর্যের সাথে বাহ্যিক সৌন্দর্য রক্ষা করাও পুষ্টিগত স্বাস্থ্যসমস্যা সমাধানের একটি অংশ। এই বইয়ে সৌন্দর্য বিষয়ের প্রাকৃতিক উপায়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানার সুযোগ রয়েছে। সুস্থতার জন্য সবচেয়ে প্রয়োজন ব্যায়াম। সেই ব্যায়াম কিভাবে করবেন, কিভাবে করবেন না তা এ বইতে পাওয়া যাবে। না বুঝে ব্যায়াম করলে পরবর্তিতে অনেক ধরনের স্বাস্থ্যসমস্যা তৈরি হয়। বয়সভেদে সবার জন্য উপযোগী কিছু ব্যায়াম এবং কোন ঋতুতে কোন ধরনের খাবার গ্রহণ করা উচিত সে বিষয়ে বিশদ ধারনা পাওয়া যাবে ‘সুস্বাস্থ্যের পূর্ণাঙ্গ সমাধান’ বইয়ে। সৈয়দা শারমিন আক্তার প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও ডায়েট কাউন্সেলিং সেন্টার info@dietcounselingcentre.com
ভেষজ ও মসলা সারাবিশ্ব জুড়ে চিকিৎসা, রান্না এবং উপভোগ্য বিষয়গুলোতে ব্যবহার হয়ে আসছে। ভেষজ বা হার্ব ও মসলা উদ্ভিজ উৎস থেকে আসে। একেকটি হার্ব বা ভেষজ আলাদা আলাদা গন্ধ ও বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হয়। তাদের একেকটি বৈশিষ্ট্যের গুণে ভেষজ ও মসলা নিজেদের অসাধারণ করে তোলে। ভেষজ উদ্ভিদের সবুজ ও পাতলা অংশ। তাজা ব্যবহারে সবচেয়ে কার্যকর ও স্বাদ বিশিষ্ট। শীত থেকে গরম প্রধান অঞ্চলে বেশি জন্মে। মসলা, গাছের পাতা থেকে মূল পর্যন্ত যেকোনো অংশ থেকে তৈরি হয়। লবঙ্গ ফুলের কুঁড়ি, দারচিনি গাছের ছাল, আদা গাছের মূল, জিরা একটি ফল, এলাচ বীজ থেকে তৈরি। মসলা সাধারণত স্বল্প পরিমাণে ব্যবহার করা হয়। শুকিয়ে ব্যবহারে এর স্বাদ বৃদ্ধি পায়। প্রাগৈতিহাসিক যুগে, মানব পূর্বপুরুষরা তাদের রান্নার পাত্রে তীক্ষè স্বাদযুক্ত পাতা যুক্ত করেছিলেন। রোমিং শিকারি—সংগ্রহকারী দলগুলো পাতা, শিকড়, ফুল ও বীজ নিয়ে পরীক্ষা—নিরীক্ষা করেছিলেন। পরবর্তীতে এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে সে ফলাফল দেয়া হয়েছিল। সভ্যতার অগ্রগতি ও যাযাবর উপজাতিরা একেক জায়গায় বসতি স্থাপন করত। ভেষজ ও মসলা সেজন্য কেবল বন্য থেকেই সংগ্রহ করা হয়নি। বরং বাসস্থানের কাছাকছি ইচ্ছাকৃতভাবেও বপন করা হয়েছিল। কৃষিক্ষেত্রের শুরুতে উদ্ভিদগুলো খাদ্য, গন্ধ, জ্বালানি, সজ্জা, বিষ, চিকিৎসা ও অস্ত্রের জন্য ব্যবহার করা হতো। যা সভ্যতার উন্নতির সাথে সাথে ব্যবহারের পরিবর্তন ঘটেছে। প্রাচীন মিশরীয়, চীনা এবং ভারতীয়দের মধ্যে এ ধরনের হার্ব ও মসলার বিভিন্ন ব্যবহার দেখা যায়। প্রথমদিকে মিশরীয়রা শুধু ওষুধেই মসলা ও ভেষজ ব্যবহার করত না, প্রসাধনী, সুগন্ধি, রান্নায় এমনকি কীটপতঙ্গকে মেরে ফেলার জন্যেও ব্যবহার করত। পরবর্তীতে দেখা যায়, বিশেষ করে আদা, গোলমরিচ, লবঙ্গ, জয়ফল, দারচিনির আবিষ্কারগুলো ছিল অনেকটা নতুন পৃথিবী তৈরির উপকরণ হিসেবে। এই মসলাগুলো ইউরোপ ও ব্রিটেন চালু করেছিল। ক্রিস্টোফার কলম্বাস আমেরিকা আবিষ্কার করেছিলেন স্পাইস দ্বীপপুঞ্জের নতুন সমুদ্রপথ অনুসন্ধান করতে গিয়ে। ১৪৯৮ সালে ভাস্কো দা গামা পর্তুগিজ নেভিগেটর দিয়ে স্পাইস দ্বীপপুঞ্জের একটি পথ আবিষ্কার করেছিলেন। ১৫২০ সালে যা দখলের জন্য পতুর্গিজ, ডাচ এবং ব্রিটিশদের মধ্যে যুদ্ধও হয়েছিল। এরপর আস্তে আস্তে মসলা ও ভেষজের উৎপাদন, সংরক্ষণ পদ্ধতির আধুনিকীকরণ হয়। পরিবহনের উন্নয়নে ভেষজ ও মসলা সর্বক্ষেত্রে তুলনামূলক সহজলভ্য হয়ে যায়। এ বইয়ের মাধ্যমে দরকারি কিছু ভেষজ ও মসলার পরিচিতি, চাষ, প্রাপ্তিস্থান ও উপকারিতার তথ্য জানা যাবে। প্রত্যেকটি ভেষজের পুষ্টিগুণও নির্ণয় করা হয়েছে। বইটি মানুষের দীর্ঘ জীবনে নানা রোগ প্রতিরোধ ও স্বাস্থ্যসচেতনতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এর তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ সহযোগিতায় ছিলেন আমার সহকারি পুষ্টিবিদ সানজিদা আফরিন। সৈয়দা শারমিন আক্তার প্রধান পুষ্টিবিদ, ডায়েট কাউন্সেলিং সেন্টার
বর্তমানে স্বাস্থ্যসচেতন মানুষের সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনি রান্নায়ও আধুনিকতা বাড়ছে। আমরা জানি, ঘরে তৈরি খাবার বাইরের যে কোনো খাবারের চেয়ে বেশি স্বাস্থ্যসম্মত। এমনকি স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আন্তর্জাতিক মানের, স্বাস্থ্যসম্মত খাবার, ঘরে তৈরির বিষয়গুলোও প্রাধান্য পাচ্ছে। অনেকটা যেন রেস্টুরেন্টের স্বাদ ঘরে তৈরি খাবারেও চলে এসেছে। এখন ইউটিউবের যুগে ঘরে খাবার তৈরি কষ্টসাধ্য কোনো বিষয় নয়। কিন্তু মজাদার খাবার হিসেবে তৈরি করার সময় স্বাস্থ্যকর বিষয়টা আমরা খেয়াল রাখছি না। বিভিন্ন রেসিপি বুক সংগ্রহে যেন আমরা ব্যস্ত! স্বাস্থ্যরক্ষায় রেসিপি বুক কতোটুকু কার্যকরি সেটাও আমাদের জানতে হবে। এখন রান্নার জন্য শুধু ইউটিউবেই মানুষজন সীমাবদ্ধ নেই। প্রত্যেকের ঘরে খুঁজলে একটি করে রেসিপি বুক পাওয়া যাবে। যেন শখ মেটাতেই এ রেসিপি। স্বাস্থ্যকর খাবার বা স্বাস্থ্যকর রান্না এখন আর শখের বিষয় নয়। অপরিকল্পিত খাদ্যাভ্যাস থেকেই মানুষ নানাভাবেই রোগাক্রান্ত হচ্ছে। তাই সুস্বাস্থ্য রক্ষায় ‘স্বাস্থ্যকর রেসিপি’ বইটি স্বাস্থ্যসচেতনদের জন্য খুবই গুরুত্বপুর্ণ। এ বইটির মাধ্যমে জানা যাবে সম্পূর্ণ দেশিয় উপাদানে আন্তর্জাতিক মানের রেসিপির ইতিবৃত্তান্ত। এক পরিবেশনে প্রতিটি খাবারের ক্যালরি, প্রোটিন, ফ্যাট ও কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ উল্লেখ আছে। জানা যাবে খুব সহজেই একজন কতটুকু ক্যালরি গ্রহণ করছেন। একই পরিবারের সদস্য হওয়া সত্ত্বেও একেকজনের শারীরিক অবস্থা একেকরকম। রুচিও আলাদা হয়। দেহের অবস্থা বুঝে, যার যার রুচি অনুযায়ী খাবার প্রস্তুতে এই রেসিপি বুক সবচেয়ে সহায়ক ও সহজ হবে। এখানে কোনো খাবার তৈরি করতে আপনার অনেক বেশি প্রস্তুতির প্রয়োজন নেই। শুধু তা—ই নয়, এ বইটি মোটামুটি অল্প সময়ের মধ্যে রান্না শেষ করার একটি অনন্য, আধুনিক ও যুগোপযোগি রেসিপি বই হিসেবেই আপনি সংগ্রহ করতে পারেন। বইটির রেসিপিগুলোতে রয়েছে স্বল্প খরচের উপকরণ। বেশি দামি উপকরণ রাখা হয়নি। পরিবারের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে স্থান—কাল—পাত্র ভেদে সব ক্ষেত্রেই এই রেসিপি বইটি হতে পারে রান্নার জন্য একটি আদর্শ বই। ‘স্বাস্থ্যকর রেসিপি’ বইটির নানা তথ্য সংগ্রহ সহযোগি হিসেবে কাজ করেছেন পুষ্টিবিদ রিফাত মাহতারিন। আমার বিশ্বাস, সুস্বাস্থ্য রক্ষায় ও স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণের নিশ্চয়তায় ‘স্বাস্থ্যকর রেসিপি’ বয়সভেদে সবার জন্য একটি দরকারি বই। সৈয়দা শারমিন আক্তার, প্রধান পুষ্টিবিদ, ডায়েট কাউন্সেলিং সেন্টার dietcounselingcentre@gmail.com
মানবজাতির জন্য আল্লাহ তায়ালা রমজান মাসকে সবচেয়ে বরকতময় মাস এবং মেহমান হিসেবে পাঠিয়েছেন। রমজান মাস সারা বছরের মধ্যে শ্রেষ্ঠ মাস। অন্য মাসে খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারা যেভাবে চলে, রমজান মাসে তা সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। সারাদিন—রাত যেন একটি নির্দিষ্ট ছকে বাঁধা। শুধুমাত্র এ মাসেই কর্মস্থলসহ সব কাজের শিডিউল পরিবর্তন হয়ে যায়। রমজানের পূর্বে সাধারণত আমরা ১১ মাস যাবৎ অভ্যস্ত ৩ বার ভারী খাবার ও ২—৩ বার হালকা খাবারে। কিন্তু রমজানে সেহরির পর সারাদিন শেষে ইফতার, ইফতারের পর রাতের খাবার, এভাবে হয়ে থাকে। সারাদিনের যে খাদ্য চাহিদা তা ৩ বার গ্রহণের মাধ্যমে পুরন হয়। রমজান মাসকে উপলক্ষ করে চলে বিভিন্ন আয়োজন। যেমন: সেহরির খাবার কী হবে? ইফতারের আয়োজন কী? এ ধরনের জিজ্ঞাসা প্রত্যেক রোজদারের মধ্যেই কাজ করে। যারা স্বাস্থ্যসচেতন, তারা অনেকেই ভাজা—পোড়া খাবার থেকে বিরত থাকেন। অনেকেই হয়তো শুধু একবার ভারী খাবার খেয়ে থাকেন। এছাড়া যাদের বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা রয়েছে, তাদের ভাবনাটাও অনেকসময় আলাদা। সমস্যা না বাড়িয়ে কীভাবে রোজা রাখা যায়। শরীরে নির্দিষ্ট কোনো রোগ থাকলেও অনেকেই রোজা রাখতে চান। মনে রাখা উচিত, রোজা পালন এমন একটি স্বাস্থ্যকর উপায়, যা সঠিক নিয়মে করলে কোনো সমস্যা তো হয় না বরং অনেক খারাপ অবস্থারও উন্নতি ঘটানো সম্ভব। ‘সহজ উপায়ে সহজ উপায়ে রমজানে সুস্থ থাকুন’ বইটির মাধ্যমে জানা যাবে রোজা পূর্ববর্তী প্রস্তুতি, পূর্ণ মাস রোজা রাখার শক্তি অর্জন এবং রোজা শেষে ঈদ পরবর্তী সঠিক খাদ্যাভ্যাস। এমনকি যে কোনো শারীরিক সমস্যায় কীভাবে রোজা রাখবেন, সে বিষয়েও বিস্তর ধারণা পাওয়া যাবে এ বই থেকে। বইটি সংগ্রহে রাখার মতো এবং এর সুফল আপনার পরিবার, স্বজন ও বন্ধুদের মাঝেও ছড়িয়ে দিতে পারেন। সৈয়দা শারমিন আক্তার, প্রধান পুষ্টিবিদ, ডায়েট কাউন্সেলিং সেন্টার dietcounselingcentre@gmail.com
পৃথিবীতে দিন দিন স্থূলতা ভয়াবহ হচ্ছে। বিশেষ করে শিশু বয়স থেকে বয়:বৃদ্ধ পর্যন্ত। শিশু কিশোরদের স্থূলতা নিয়ন্ত্রণে না থাকার কারণে প্রাপ্তবয়সেও স্থূলতা স্থায়ী রূপ নিচ্ছে। অনেক সময় আমরা নিজ সন্তানের সঙ্গে অন্যের সন্তানের স্বাস্থ্য নিয়ে তুলনা করে থাকি। যেন মনে হয় অন্যের সন্তান নিজেরটার চেয়ে স্বাস্থ্যবান। স্বাস্থ্য বাড়ানোর জন্য অন্যের ন্যায় আমরা শিশুকে অতিরিক্ত খাবার খাওয়ানোর প্রতিযোগিতায় নেমে যাই। যা শিশুর ছোট্ট পাকস্থলী আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে। শিশু বয়সে তার যতটুকু খাওয়া প্রয়োজন, তার চেয়ে অনেক বেশি খাদ্য গ্রহণের অভ্যাস তৈরি হয়। এক্ষেত্রে মা বাবা অনেক সময় খেয়াল করেন না। ছোট্ট বয়সে বেশি খাওয়ার কারণে শিশুর অবসাদগ্রস্থতা দেখা দিতে পারে। খেলাধূলায় যে পরিমাণ এনার্জি দরকার সেটা থাকে না। সারাক্ষণের সঙ্গী হিসেবে হালের মোবাইল, ট্যাব, ল্যাপটপ, কম্পিউটার তো আছেই। ধীরে ধীরে আমরা অলস হয়ে যাচ্ছি। দেহের ওজনও বাড়ছে। শহরে বসবাসরত একজন কর্মব্যস্ত গৃহিনী বা মায়েরা আজকাল অনেক ব্যস্ত। গেজেটে আসক্তি ও ঘরের বাইরে রেস্টুরেন্টে খাওয়া দাওয়ার কারণেও ঘরে রান্না কম হচ্ছে। অনেকেই মাংস বেশি পরিমাণে রান্না করে ফ্রিজিং করেন এবং প্রতিদিন সেখান থেকে খাচ্ছেন। রান্নার এমন পদ্ধতির জন্য শিশুদের মধ্যে শাক—সবজি কিংবা মাছ খাওয়ার অভ্যাস তৈরি হয় না। এতে শিশুকাল থেকে দেহের বিপাকীয় প্রক্রিয়ায় কিছু পরিবর্তন হতে থাকে। বাড়ন্ত বয়সে যখন শিশুর পুষ্টি অনেক বেশি প্রয়োজন, তখন তার সামনে থেকে আমরা খাবার কেড়ে নেই। কিংবা মুটিয়ে যাওয়ার কারণে অন্যসব পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার থেকেও বঞ্চিত করা হচ্ছে। কিশোর বয়সে স্লিম হওয়ার প্রতিযোগিতাও কাজ করে। দেহে সবচেয়ে বেশি পুষ্টির প্রয়োজন হয় এ বয়সে। একদিকে পর্যাপ্ত পুষ্টির অভাব অন্যদিকে আজকাল ছেলেমেয়েদের মধ্যে কিশোরকাল বলতে যা বোঝায়, তা দেখা যাচ্ছে না। দেখা যায় সকালে ঘর থেকে বেরুচ্ছে স্কুল ড্রেস পরা অবস্থায়, আর ঘরে প্রবেশ করতে করতে রাত। স্কুল, কোচিংয়ের কারণে অনেককেই বাইরের খাবার খেতে হচ্ছে। এ অভ্যস্ততা আস্তে আস্তে স্থূলতার জন্ম দিচ্ছে। কিশোর—কিশোরীদের সঙ্গে মায়েদেরও একই অবস্থা। সারাদিনে ছেলেমেয়েদের খাদ্যাভ্যাস আর মায়েদের খাদ্যাভ্যাস একই। দীর্ঘ সময় মায়েদেরও একই পজিশনে বসে থাকার প্র্যাকটিস তৈরি হচ্ছে। শুধু তাই নয় রাস্তার জ্যামে বসে থাকা, ঘরে টেলিভিশনে সিরিয়াল কিংবা টক শো দেখার কারণে অতিরিক্ত ওজন বাড়ছে। কর্মক্ষেত্রেও একই অবস্থা। বর্তমানে আমরা কম্পিউটার নির্ভর কাজই বেশি করি। ডেস্ক জবে ২—৩ মাসের মধ্যেই কোমরের সাইজ বেড়ে যেতে থাকে। পুরুষেরা বাসায় আসার পথে হয়তো কিছুটা হাঁটাহাঁটি করেন। মায়েদের কর্মক্ষেত্রের পাশাপাশি সংসার সামাল দিতে হয়। যে কারণে পুরুষদের চেয়ে মহিলাদের মধ্যে অতিরিক্ত ওজন ও স্থূলতার প্রকোপ বেশি। একজন স্থূল ব্যক্তি অনেকের মধ্যে যখন অবস্থান করেন, তখন তাকে অনেক কটুক্তির সম্মুখীন হতে হয়। স্থূল ব্যক্তিদের বিষন্নতার অন্যতম কারণ এই কটুক্তি। বিষন্নতার সঙ্গে অন্ত্রনালীর একটি যোগসূত্র আছে। স্থূল ব্যক্তিদের সেজন্য খাওয়ার আকাংখা অনেক বেশি হয়ে থাকে। অনেকেই আজকাল ইন্টারনেটের বিভিন্ন ফরমায়েশী ডায়েটে অভ্যস্ত হয়ে ওজন কমানোর চেষ্টা করছেন। এতে তার মেটাবলিজম আরও বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়। অন্যদিকে লাইফস্টাইলের সাথে ফুডহ্যাবিটের সামঞ্জস্য না থাকায় ওজন বেড়ে যায়। ওজন বেড়ে স্থূল হয়ে যাওয়া অপরাধের কিছু নয়। স্থূলতা প্রতিরোধযোগ্য। নিজের পছন্দকে প্রাধান্য দিয়েও কিছু নিয়মে অভ্যস্ত হয়ে ওজন কমানো সম্ভব। এ বইটিতে কীভাবে সহজ উপায়ে লাইফস্টাইল পরিবর্তন করে খাদ্যাভ্যাসের সাথে সামঞ্জস্য বিধান করে ওজন কমানো যায়, তা তুলে ধরা হয়েছে। আবার ওজন নিয়ন্ত্রণ করে কর্মময় সুস্থ জীবনযাপনেও কীভাবে দীর্ঘদিন সুস্থ থাকা যায় তার সহজ সমাধান পাওয়া যাবে। সৈয়দা শারমিন আক্তার প্রধান পুষ্টিবিদ, ডায়েট কাউন্সেলিং সেন্টার
নারী স্বাস্থ্য, পুরুষদের তুলনায় অনেকটা পৃথক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘স্বাস্থ্যকে সম্পূর্ণ শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক সুস্থতার একটি রাষ্ট্র হিসেবে বর্ণনা করেছে। নারী স্বাস্থ্যকে কেবল রোগ বা অসুস্থতার অভাব বলা হয়নি’। নারীর স্বাস্থ্য হিসেবে মহিলাদের প্রজনন স্বাস্থ্যের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে নারী স্বাস্থ্যে ঝুঁকি, অভিজ্ঞতা এবং সুবিধাবঞ্চিত সবই আছে। নারী স্বাস্থ্য কেবল জীববিজ্ঞানের দ্বারা নয়, দারিদ্র-কর্মসংস্থান এবং পারিবারিক দায়বদ্ধতার মতো পরিস্থিতিতেও প্রভাবিত হয়। আমাদের মতো দেশগুলোতে স্বাস্থ্যসেবার অসুবিধার মাত্রা যত বেশি, ততবেশি এর ক্ষতিকর প্রভাবগুলোও দেখা যায়। পুরুষদের স্বাস্থ্যের তুলনায় মহিলাদের প্রজনন ও যৌন স্বাস্থ্যের আলাদা পার্থক্য রয়েছে। গর্ভাবস্থা ও প্রসবকালীনে প্রতি বছর ১ মিলিয়ন মাতৃমৃত্যু যথেষ্ট ঝুঁকির মধ্যে থাকে। উন্নয়নশীল আর উন্নত দেশগুলির মধ্যে নারী স্বাস্থ্যসেবার পার্থক্যের কারণে মৃত্যুর হারে ব্যবধান রয়েছে। নারী মৃত্যুর মধ্যে যেসব অপ্রজননজনিত রোগ রয়েছে। যেমন কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজের চেয়ে প্রিএক্ল্যাম্পসিয়াসহ গর্ভাবস্থায় মৃত্যু বেশি। যৌন সংক্রমণে নারী ও শিশুদের মারাত্মক পরিণতি হতে পারে। নবজাতকের মৃত্যু, বন্ধ্যাত্ব, জন্মনিয়ন্ত্রণ, অপরিকল্পিত গর্ভাবস্থা এমনকি গর্ভপাতের মতো অবস্থাগুলোতেও নারী স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও সেবা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিনিয়ত নারী স্বাস্থ্য সুরক্ষায় চেক আপের গুরুত্বও অনেক। নারীদের বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে। যেগুলোর সাধারণ লক্ষণ হিসেবে শ্বাসকষ্ট, যোনি থেকে রক্তপাত হওয়া, অপরিকল্পিত যোনিস্রাব, ক্লান্তি, ওজন হ্রাস পাওয়া, চুলকানী, প্রস্রাবের নালী ফুটো, পা ফোলা ও ব্যথা হওয়া ইত্যাদি হতে পারে। স্বাস্থ্য চেকআপের সুবিধা থাকলে পরবর্তী ধাপে বিপদের সম্ভাবনা কম থাকে।
কৈশোর বা বয়ঃসন্ধিক্ষণ সময়টা মানবজীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। কারণ জীবনের এই পর্যায়েই শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক পরিবর্তন ঘটে। শুধু তা-ই নয়, এসময়ে মানুষের চিন্তা-চেতনা, বুদ্ধি-বিবেচনাতেও অনেক পরিবর্তন আসে। বর্তমানে বাংলাদেশে শিশু-কিশোররা শিশুকাল থেকেই নানা ধরনের হয়রানির শিকার হয়। বয়ঃসন্ধিকালে তাদের অনেক ধরনের জানা-অজানা তথ্য জানতে চাওয়ার আগ্রহ বাড়ে। তাই এ সময়ে সঠিক তথ্য না জানার অভাবে কিশোর-কিশোরীরা খুব সহজেই বিপথগামী হয়ে পড়তে পারে। এতে পরবর্তী জীবনে অনেক বড় সমস্যায় জড়িয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে। অনেক সময় পরিত্রাণের উপায়ও থাকে না। শুধুমাত্র পুষ্টি বিষয়ে জানলেই হবে না। পাশাপাশি ভবিষ্যতের কর্ণধার হওয়ার জন্য ব্যক্তিত্ব, চিন্তাশক্তি, সময়ের ব্যবহার সবকিছুই জানতে হবে। বর্তমানে কিশোর-কিশোরীদের পুষ্টি বিষয়ক কিংবা সামাজিক হয়রানি রোধে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। তারপরও কিশোরী-কিশোরীদের জন্য বই, যেখানে তাদের নানা অজানা তথ্যের সমাধান পাওয়া যাবে- এই বিষয়গুলো এখনো তেমনভাবে নেই। কৈশোরে ছেলেমেয়েদের পাশাপাশি মা-বাবা, স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা, বড় ভাই-বোনেরও আচরণগত কিছু বিষয় জানা প্রয়োজন। সবার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে পরিবার ও সামাজিক দায়বদ্ধতা কেমন হবে- এ বইটিতে সেসব উল্লেখ করা হয়েছে। যে বিষয়গুলো জানতে হয়তো অনেক সময় বিভিন্ন ধরনের বই কিংবা তথ্য সংগ্রহের প্রয়োজন পড়ে, সেসব বিষয়ে একটা বই থেকেই জানা যাবে। এ বইটি কিশোর-কিশোরীদের পাশাপাশি মা-বাবা, ভাই-বোন, শিক্ষক-শিক্ষিকা সবার সংগ্রহে রাখার মতো একটি দরকারি বই।
সৈয়দা শারমিন আক্তার, প্রধান পুষ্টিবিদ, ডায়েট কাউন্সেলিং সেন্টার